বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
আবু মঈন মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদ (১৯৪৯-১৯৭১)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচের অফিসারদের একজন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[১]
আবু মঈন মো. আশফাকুস সামাদ ১৯৪৯ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার সতেরো দরিয়া গ্রামে। তার পিতা আ ম আজিজুস সামাদ ছিলেন আবগারী বিভাগের কর্মকর্তা; আর মাতা সাদেকা সামাদ ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। ঢাকার সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন।[২]
১৯৭১ সালে সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, ২৯ মার্চ তিনি তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ যান। সেখানে ২ ও ৪ নং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করেন। তারপর সামাদ ভারতের আগরতলায় যান এবং প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে[১] সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[২]
প্রশিক্ষণ শেষে সামাদ সেক্টর-২ এর অধীনে কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। পরবর্তীতে ৯ অক্টোবর তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন পান এবং সেক্টর-৬ এর সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরের একটি কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্ব পান। জয়মনিরহাট, ভুরুঙ্গামারী, রায়গঞ্জ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার নেতৃত্বেই ভুরুঙ্গামারী এবং আশেপাশের এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সেখানে মুক্তাঞ্চল গঠন করা হয়।[২]
১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর মধ্যরাতে (অর্থাৎ, ২০ নভেম্বর) কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জে যুদ্ধটি ঘটে। ১৪ নভেম্বর ভূরুঙ্গামারী থেকে পিছু হটে[৩]পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫-পাঞ্জাব রেজিমেন্ট রায়গঞ্জ সেতুর পাশে ঘাঁটি তৈরি করেছিল। এ ঘাঁটি দখল করতে মুক্তিযোদ্ধারা লেফটেন্যান্ট সামাদ এবং লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহর নেতৃত্বাধীন দুটি দলে বিভক্ত হয় এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু, সেতুর নিচে যে পাক সেনারা এলএমজিসহ বাঙ্কার তৈরি করেছে সে খবর তারা পাননি। ফলে, যাওয়ার পথে তারা নিজেরাই পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আক্রান্ত হন। আকস্মিক এ বিপর্যয়ে বিচলিত না হয়ে সামাদ সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে থাকলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনিসহ তার অনেক সহযোদ্ধা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।[৪][৫]
পরবর্তীতে, কমান্ডার বাশারের নেতৃত্বাধীন একটি দল এ ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। ফলে ২১ নভেম্বর ২৫-পাঞ্জাব রেজিমেন্ট পিছু হটে নাগেশ্বরীতে চলে যেতে বাধ্য হয়।[৫] তখন সামাদের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং যথাযথ মর্যাদায় জয়মনিরহাট মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।[৬]
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সামাদকে মরণোত্তর বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। স্থানীয়রা সামাদের শেষ যুদ্ধক্ষেত্র জয়মনিরহাটের নাম রাখেন সামাদ নগর।[২]
তাঁর সম্মানে ঢাকার মতিঝিলের দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত সড়কটির নাম রাখা হয়েছে বীরউত্তম আশফাকুস সামাদ সড়ক। [২] এছাড়াও, তার নামানুসারে জয়মনিরহাটের লে. সামাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং রংপুর ক্যান্টনমেন্টের বীরউত্তম শহীদ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে।[৭]
[সম্পাদনা]
Wikipedia থেকে সংগ্রহীত