বিশ্বজিৎ চন্দ্র সরকার - বিশেষ প্রতিনিধি
ঢাকা, বৃহস্পতিবার,৮ মে,২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ: দুর্নীতি ঢাকতে ভ্রাম্যমান আদালত দেখিয়ে সাংবাদিককে কারাদন্ড দেওয়া সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইউএনও শেখ রাসেল ও তার সহযোগীদের বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৮ মে বিকেল ৩টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট এ স্মারকলিপি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সংগঠনটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে ইতিমধ্যে শুধু রংপুরে দায়সারা বদলি করেছেন। এতে সাংবাদিক সমাজ খুশি হতে পারেনি। বদলি চাকরিজীবীদের রুটিন ওয়ার্ক। একজন পেশাদার সাংবাদিক পেশাগত কাজে গিয়ে হামলার শিকার হলেন, তথ্য সংগ্রহে বাঁধাগ্রস্থ হয়েছেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল সাংবাদিকের কোন অভিযোগ না শুনে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের একতরফা কথায় তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দিয়ে দুর্নীতি অনিয়মকে উস্কে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে ইউএনও শেখ রাসেল সাংবাদিকতা পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, নিজের হেডাম দেখাতে ভ্রাম্যমান আদালতের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারাদন্ড এবং জরিমানা করেন, যা গোটা সাংবাদিক সমাজের সম্মান ক্ষুন্ন করেছেন।
তবে আমরা একজন রাসেল কে কেন্দ্র করে গোটা প্রশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই না, আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
ইতিমধ্যে বুধবার ৭ মে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিক দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সাতক্ষীরার তালা উপজেলা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রিপন বিশ্বাস আপিল মামলার শুনানি শেষে তাকে অব্যাহতি দেন।
ঘটনা ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা প্রশাসনের একটি ভবন নির্মাণ কাজ চলার সময় গত ২১ এপ্রিল অনিয়মের অভিযোগ করায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন সাংবাদিক টিপু সুলতানকে ছাতা দিয়ে মারধর করে আহত এবং লাঞ্ছিত করেন, যা বিচার্য অপরাধ।
প্রতিবাদ করার এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে অন্যত্র অবস্থান করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রকৌশলী এম এম মামুন, ঠিকাদার ও ঠিকাদারের শ্রমিকদের কাছে ঘটনা শুনে সাংবাদিক টিপুকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
প্রতিবাদে ২৩ এপ্রিল ও ২৪ এপ্রিল ঢাকা-সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তালার সাংবাদিকরা মানববন্ধন করতে চাইলে তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত স্ত্রী ইলোরা পারভীন স্বামীর পক্ষে আপিল ও জামিন আবেদন করতে চাইলে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধাগ্রস্থ করা হয়।
এ ঘটনায় গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দেন। পরদিন সাতক্ষীরায় গিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসেন এবং সংগঠনের পক্ষে আদালতে আহমেদ আবু জাফর জামিন আবেদন করলে টিপু জামিনে মুক্তি লাভ করে।
এক পর্যায়ে আন্দোলনের মুখে ২৪ এপ্রিল দুপুরে টিপুকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জামিনে মুক্তি দেন। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়রুল বদিউজ্জামান বাচ্চু জানান, গত ২৪ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর গত ৫ মে ওই মামলার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। মঙ্গলবার শুনানি শেষে বিচারক রিপন কুমার বিশ্বাস তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, রোকনুজ্জামান টিপুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হয়রানিমূলক মামলা প্রদানকারী তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেলকে গত ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রংপুর বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
স্মারকলিপি প্রদান কালে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ সম্পাদক নুরুল হুদা বাবু, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ মাহমুদ আইটি বিভাগের সদস্য আশরাফুল ইসলাম রোহিত, সদস্য মনি আক্তার প্রমুখ।