সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ১১:৪২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ শাহজাহান বাশার
তারিখ: সোমবার, ১৯ মে ২০২৫ | ঢাকা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আজ সোমবার নগর ভবনে ‘ব্লকেড’ বা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে তার সমর্থকরা। ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে সংগঠিত এই আন্দোলন চতুর্থ দিনেও অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করেছেন, যার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও সরকারের একটি নির্দিষ্ট পক্ষের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন তারা।
এদিন নগর ভবনের আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেয় ইশরাকপন্থী শতাধিক কর্মী ও সমর্থক। তাদের হাতে ছিল ব্যানার-ফেস্টুন, যাতে লেখা ছিল “আমার ভোট, আমার অধিকার”, “ইশরাকই বৈধ মেয়র”, “গেজেট প্রকাশের পরও শপথ অনুষ্ঠান বিলম্ব কেন?”—এমন সব দাবিদাওয়া। সমাবেশে ইশরাক হোসেনের শপথ অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে স্লোগানে মুখর ছিল পুরো এলাকা।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন আজ দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন ও কড়া ভাষার পোস্ট দেন, যেখানে তিনি বলেন, “মেয়র ফেওর কিছু না। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় ব্যক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটিকে চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটাই বের করে আনাটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।”
তিনি আরো লিখেন, “অনেক সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছি, পিতা-মাতা তুলে গালিগালাজও চুপ করে সহ্য করে গিয়েছি। কারণ একটাই, এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের ভোটার অধিকারের স্বার্থে। সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করবে তা ক্লিন-কাট বুঝিয়ে দিল।”
ইশরাক আরো বলেন, “কোনো কথা চলবে না। যারা নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়েছে, বরঞ্চ একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এরা হাসিনার মতোই বিচারকদের হুমকি দিয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছে, উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে। এবং আমলাতন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি কুচক্রী পরিকল্পনা করছে। একদিন এদের সবার নাম-পরিচয় প্রকাশ পাবে।”
সবশেষে তিনি লেখেন, “হাসিনারেও বলছিলাম, কবরটা ঠিক করাই আছে। আল্লাহর হুকুম থাকলে সেখানেই হবে ইনশাআল্লাহ। লড়াই শেষ হয় নাই। হয় দাবি আদায় করবো, নাহয় আল্লাহর নির্ধারিত স্থানে মাটির নিচে শায়িত হব। গণতন্ত্রের সাথে, জনগণের ভোটার অধিকারের সাথে এক চুল ছাড় হবে না।”
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হন ইশরাক।
এরপর দীর্ঘ শুনানির পর চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল শেখ তাপসের জয় বাতিল করে দেন এবং ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন। পরে ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক গেজেট প্রকাশ করে ইশরাককে মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু তারপরও আজ অবধি তার শপথ অনুষ্ঠান হয়নি, যার বিরুদ্ধে ইশরাকপন্থীরা লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
আজকের সমাবেশে অংশ নেওয়া কয়েকজন আন্দোলনকারী বলেন, “গেজেট প্রকাশের পরও কেন শপথ অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া হচ্ছে? এটা স্পষ্টত একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত।” তারা আরও বলেন, “যতদিন না পর্যন্ত ইশরাক ভাইকে মেয়রের চেয়ারে বসানো হচ্ছে, ততদিন আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে নগর ভবনে আমরণ অনশন করা হবে।”
এই পরিস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণের প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। প্রশ্ন উঠছে, গেজেট প্রকাশের পরও একজন নির্বাচিত মেয়রের শপথ অনুষ্ঠান বিলম্বিত করার আইনি বা নৈতিক বৈধতা কতটুকু? একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও বিতর্ক তীব্র হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দ্রুত একটি সমাধানে না পৌঁছানো যায়, তাহলে এই অচলাবস্থা ভবিষ্যতে আরও বড় রাজনৈতিক সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।