কক্সবাজার প্রতিনিধি।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি- ইউসিবি ঈদগাঁও বাজার উপশাখার ৩৮ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের আমানত নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ কর্মকর্তাকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। আত্মসাকৃত টাকা থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংগঠিত ঘটনায় দূর্নীতি দমন কমিশন- দুদক কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নানা গড়িমসি করেন প্রতিষ্ঠানটির উপশাখা ইনচার্জ মোঃ আব্দুল্লাহ
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, এ ব্যাংকের ঈদগাঁও বাজার উপশাখায় কর্মরত ক্যাশ অফিসার ফরহাদ প্রতিষ্ঠানটির ৩৮ লক্ষ টাকা বিশেষ কৌশলে আত্মসাৎ করেছেন। এ টাকা প্রথমে তিনি তার বিকাশ একাউন্টে ট্রান্সফার করেন। পরে সেখান থেকে ক্যাসিনো একাউন্টে প্রদান করেন। আত্মসাৎকৃত টাকা তিনি গেম খেলায় ব্যয় করেছেন বলে জানান উপশাখা ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
তবে এ ব্যাপারে ইনচার্জের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি সংশ্লিষ্ট তথ্য দিতে নানা গড়িমসি করেন। তাকে দেশ, জাতি ও গ্রাহক সাধারণের আমানতের নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হলেও এটি অফিসের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে এড়িয়ে যেতে থাকেন।
প্রতিবেদক নাছোড় বান্দার মত স্পর্শকাতর এ বিষয়ে বারবার তথ্য চেয়েও প্রয়োজনীয় পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাইনি। একপর্যায়ে তিনি আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। বলেন, হিসাব প্রতিবেদন পরীক্ষা কালে বিষয়টি তাদের নজরে আসে। সাথে সাথে তিনি ব্যাংকটির ঈদগাঁও শাখার ব্যবস্থাপককে বিষয়টি অবহিত করেন।
ঈদগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক এ ব্যাপারে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের লিগ্যাল উইংকে জানান বলে জানিয়েছেন উপশাখা ইনচার্জ। পরে তাদের পরামর্শ মত দূদকের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে অভিযোগ দেন। অভিযুক্ত ক্যাশ কর্মকর্তাকে ঈদগাঁও থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে অভিযুক্তের পিতা ও মাতা পরদিন উপশাখা কার্যালয়ে আসেন।
অভিযুক্ত কর্মকর্তার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপশাখা ইনচার্জ আরো জানান, আত্মসাৎকৃত টাকা অভিযুক্তের পিতা-মাতারা ফেরত দেবেন বলে লিখিত কমিটমেন্ট দিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা এ উপশাখা নিয়ন্ত্রণকারী শাখা তথা ঈদগাহ শাখার শাখা প্রধানের (ম্যানেজার) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে সশরীরে যোগাযোগ করেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ইতস্তত করতে থাকেন। বিষয়টির ব্যাপারে তাকে দৃষ্টিগোচর করা হলে প্রথমে তিনি এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানান।
সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরশীল সূত্রে এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, কেন তাকে সাংবাদিকদেরকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে? তিনি কি তথ্য সরবরাহ করতে তাদের নিকট বাধ্য?
জনগণের স্বার্থ এ বিষয়টি তার নিকট উপস্থাপন করা হলেও তিনি এ ব্যাপারে কোন ধরনের তথ্য দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। বলেন, আপনারা যে সূত্র থেকে তথ্য পেয়েছেন সে সূত্রের উপর নির্ভর করে নিউজ করে দিন। আমার কাছে আসছেন কেন? আমি তো আপনাদেরকে কোন তথ্য দেব না। তথ্য দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রয়েছে।
বারবার বিষয়টির ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি রেগে গিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলতে থাকেন।
এর আগে শুরুতেই তিনি বলেন, তার এক ভাইও সাংবাদিক রয়েছেন। পরে তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংবাদিকদের নাম বলে স্থানীয় প্রতিবেদকদের মধ্যে ভীতি সংশারের চেষ্টাও করেন।
ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মছিউর রহমান জানান, গত ২৯ এপ্রিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি ঈদগাঁও বাজার উপশাখার একজন কর্মকর্তা কর্তৃক টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তাদেরকে জানানো হয়। এ ব্যাপারে ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহায়তা চাইলে আমরা ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অভিযুক্তকে আদালতে প্রেরণ করি।
ব্যাংক কর্তৃক দূর্নীতি দমন কমিশন-দূদক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন থানার এ অফিসার ইনচার্জ।
ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি ঈদগাঁও শাখার প্রাক্তন ব্যবস্থাপক ও বর্তমানে ব্যাংকটির ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে যোগদানকৃত আজমল বলেন, টাকা আত্মসাত ও লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথাও তিনি শুনেছেন। তিনি আরো জানান, ইউসিবির উপশাখায় কর্মরত অন্যান্যরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
তিনি ব্যাংকের সমুদয় টাকা গ্রাহক কর্তৃক বিভিন্ন খাতে জমানো টাকা বলে জানান। তবে এতে গ্রাহকের কোন ক্ষতি হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক কক্সবাজারের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়া বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ৩৭০টির মতো অভিযোগ রয়েছে।
তবে আমার কাছে আছে ৩০ টি। হয়তো অন্য কোন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের হতে পারে।