মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ০৯:২৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
জাতীয় পার্টি রংপুর মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন কুড়িগ্রাম উলিপুরে বুড়ি-তিস্তা নদীর গড় কেটে মাটি বিক্রি: হারুনর রশীদকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড বেগম খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে দিপু ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হাজারো জনতার স্রোত নওগাঁর মহাদেবপুর কুড়াল মন্ডল পাড়া হারুন রশীদ নামের এক কৃষকের বর্জ্রপাতে মৃত্যু কসবা সীমান্ত দিয়ে গুলিবিদ্ধ ভারতীয় চোরাকারবারীর অনুপ্রবেশ: ঢাকায় হাসপাতাল থেকে বিজিবির অভিযানে আটক সুজন বর্মন ঈদগাঁওতে ক্যাসিনো কাণ্ডে ১ ব্যাংক কর্মকর্তাকে আদালতে সোপর্দ নোয়াখালীতে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১১, ঢাকায় শাপলা চত্বরে গণ হত্যার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় ছাত্রশিবিরের মানববন্ধন ভালুকায় ভাড়াটিয়ার ছুরিকাঘাতে বাড়ির মালিক খুন

কসবা সীমান্ত দিয়ে গুলিবিদ্ধ ভারতীয় চোরাকারবারীর অনুপ্রবেশ: ঢাকায় হাসপাতাল থেকে বিজিবির অভিযানে আটক সুজন বর্মন

 

মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত এলাকা দিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশকারী এক ভারতীয় চোরাকারবারীকে রাজধানীর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশের পরপরই গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্যভিত্তিক অভিযানের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা হয়। বিজিবির তৎপরতায় আজ (৫ মে) দুপুরে মগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাকে আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে মগবাজার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আটককৃত ওই ব্যক্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার বটতলী গ্রামের বাসিন্দা সুজন বর্মন। তার বাবার নাম মঙ্গল বর্মন। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সুজন একজন পেশাদার চোরাকারবারী এবং একটি সীমান্ত-ভিত্তিক চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য। সন্দেহ করা হচ্ছে, সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশের সময় প্রতিদ্বন্দ্বী চক্রের সঙ্গে গোলাগুলিতে আহত হয় সে।

▣ চোরাচালান চক্রের ছায়া: বিজিবির গোয়েন্দা তৎপরতার নতুন দিগন্ত
সূত্র জানায়, কসবা সীমান্ত দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কিছু সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট মাদক, গরু, ফেনসিডিল ও অন্যান্য চোরাচালানপণ্য বাংলাদেশে পাচার করে আসছে। সুজন বর্মনের বাংলাদেশে প্রবেশ এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি বিজিবির গোয়েন্দা বিভাগকে নতুন করে সক্রিয় করে তোলে। ধারণা করা হচ্ছে, সুজন বর্মন চোরাকারবারিদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা অন্য কোনো পাচার চেষ্টাকালে গুলিবিদ্ধ হন।

জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর চক্রের সহযোগীরা তাকে চিকিৎসার জন্য গোপনে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং মগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সে নাম-পরিচয় গোপন রেখেই ভর্তি হয়। তবে সীমান্ত থেকে বিজিবি’র গোয়েন্দা ইউনিটের পর্যবেক্ষণ ও স্থানীয় সূত্রের সহায়তায় তার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।

বিজিবির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা শুরু থেকেই তার গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলাম। অবশেষে আজ দুপুরে একটি যৌথ অভিযানের মাধ্যমে তাকে মগবাজার এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।”

পরবর্তীতে সুজন বর্মনকে ঢাকার মগবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান সংশ্লিষ্টতা এবং নিরাপত্তা হুমকির অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ রাকিব হাসান বলেন, “সীমান্ত দিয়ে যেন কোনোভাবেই অনুপ্রবেশ বা চোরাচালান না হয়, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছি। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তি ব্যবহার আরও জোরদার করা হয়েছে।”

এ ধরনের অনুপ্রবেশ এবং গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভারতীয় নাগরিকের ঢাকায় উপস্থিতি সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সীমান্ত এলাকার মানুষ চোরাচালান প্রতিরোধে আরও কড়াকড়ি আরোপের দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনাও তুঙ্গে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় জরুরি। সুজন বর্মনের মতো পেশাদার অপরাধী যারা দুই দেশের মধ্যবর্তী এলাকাকে অপরাধের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে, তাদের দমন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন।

সুজন বর্মনের আটক ঘটনা শুধু একটি চোরাকারবারী ধরা পড়ার গল্প নয়, এটি বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অপরাধ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জটিলতার একটি প্রতিচ্ছবি। বিজিবি ও পুলিশের যৌথ তৎপরতা প্রশংসার দাবিদার হলেও এই ঘটনার মাধ্যমে সীমান্তে আরও প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি এবং অপরাধ দমনে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আবারও প্রমাণিত হলো।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত