বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
দুদকের চোখে চৌদ্দগ্রামের সড়ক প্রকল্প: ১.৬৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ ঘিরে দায়মুক্ত দুর্নীতির আলামত কুড়িগ্রামে নিজের দেওয়া ফাঁদে নিজেই নিহত স্বৈরাচারের দোসর কীভাবে বিআরডিবির চেয়ারম্যান?—সাধারণ মানুষের তীব্র প্রশ্নে মুখর ব্রাহ্মণপাড়া বগুড়ায় অটোরিকশা চালক হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড ২ হাতিয়া স্টুডেন্ট ফোরাম, চবি’র ৭ম কার্যকরী কমিটি গঠন নোয়াখালীতে বিস্ফোরক মামলায় বিএডিসির গুদামরক্ষক গ্রেপ্তার কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং বিষয়ক প্রশিক্ষণের সমাপনী ও সাটিফিকেট প্রদান মুভমেন্ট ফর পাঙ্কচুয়ালিটির সেমিনার; কুইজ প্রতিযোগিতা ও র‍্যফেল ড্র অনুষ্ঠিত গাজীপুরে মাওলানা রইস উদ্দিনকে নির্যাতনের পর কারাগারে মৃত্যু : সারাদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশে উত্তাল আহলে সুন্নাত জনতা, ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর বাসির মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

ছাত্র- জনতার আন্দোলনে বিপক্ষে অবস্থান নেয়া ঈদগাঁওর ইউএনও এখনো সপদে বহাল

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়া ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা এখনো সপদে বহাল রয়েছে। এ নিয়ে উপজেলার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছাত্র-জনতার মাঝে দিন দিন ক্ষোভের বহিঃ প্রকাশ ঘটছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলন চলাকালে ৩ আগস্ট বিকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২০/৩০ জনের একটি দল ঈদগাঁও বাস-স্টেশনে মিছিল বের করে। সঙ্গে সঙ্গেই তাদের উপর প্রকাশ্যে হামলা করে সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। উপজেলা প্রশাসনের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ঘটনাস্থল এক কিলোমিটার দূরে এবং ঈদগাঁও থানার অবস্থান দুই কিলোমিটারের মধ্যে
হলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। বরং আন্দোলনকারীদের ধরপাকড়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

পরদিন ৪ আগস্ট বিকালে আবারো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ঈদগাঁও বাসস্টেশনে প্রকাশ্যে সশস্ত্র অবস্থান নেয় দুই শতাধিক আওয়ামী সন্ত্রাসী। তাদের সাথে স্টেশনের দক্ষিণে ঈদগাঁও উপজেলার ইউএনও সুবল চাকমা ও উত্তরে ঈদগাঁও থানার তখনকার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা ও সদ্য বদলি হওয়া সেকেন্ড অফিসার এস, আই জুয়েলের নেতৃত্বে পুলিশ অবস্থান নেয়। ইউএনও প্রকাশ্যে আন্দোলনকারীদের দমনের নির্দেশ দেন। আন্দোলনকারীরা সড়কে বিক্ষোভ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই তাদের উপর হামলা করে পুলিশ ও আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বেঁধে গেলে স্টেশনে থাকা ছোট বড় অর্ধশতাধিক গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায় আওয়ামী দোসর এ ইউএনও। যার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তখন। তার অফিসিয়াল গাড়িটিও পুড়ে যায় ঐদিন।

পরদিন ৫ আগস্ট সরকারের পতন হলেও উক্ত ইউএনও, ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের উপর ঐদিন মুহুর্মুহু গুলি ছোঁড়ে। এ সুযোগে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিজেদের রক্ষায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং থানায় হামলা করে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করে। এদিন পুলিশের গুলিতে শাহেদ মোস্তফা নামে এক আন্দোলনকারী নিহতসহ ২০/২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলেও ইউএনও সুবল চাকমা এখনো সরকারি সম্পদ ইউএনওর গাড়ি পোড়ার ঘটনায় কোন মামলা করেননি। কারণ তার মিশন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রক্ষা করা। এর পরিবর্তে তিনি এখনো আগের মত নিয়মিত রাতের আধাঁরে তার কার্যালয় ও বাহিরের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে গোপন বৈঠক ও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে তাদের উপস্থিতি ও অন্তর্ভুক্তি অব্যাহত রাখেন।
সরকার পতন পরবর্তী বন্যায় সরকারী ত্রাণ সহায়তাও আওয়ামী চরদের যোগসাজশে ক্রয় ও বিতরণ করে বলে অভিযোগ আছে।

এদিকে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত ও তার ছত্রছায়ায় আইনি গ্যাঁড়াকলে চলমান রাখা আওয়ামী সন্ত্রাসী মাহমুদুল করিম মাদুর কমিটির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে। তারা মাহাসড়ক অবরোধ করে রাখে ৫/৬ ঘন্টা। অবরোধস্থল উপজেলা কার্যালয় থেকে অর্ধকিলোমিটারের কম হলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা একবারের জন্যও পরিদর্শনে যাননি।

পরদিন আন্দোলনকারীদের সাথে নানা চাতুরতাৎ তিনি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে কর্ম বিরতিতে রাখেন এবং বিগত আওয়ামী কমিটির দোসরদের পরামর্শক্রমে প্রশ্নবিদ্ধ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। অথচ জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটিতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন থেকে একজন প্রতিনিধি রাখার নির্দেশনা দিলেও তিনি তার তোয়াক্কা করেন নি। এ অচলাবস্থা চলাকালীন স্কুলের সংরক্ষিত অফিস কক্ষ, সিসি ক্যামরা ভাংচুর ও গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব তার ব্যর্থতার প্রমাণ। সাধারণ অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সচেতন মহলের অভিমত ইউএনও সুবল চাকমা আন্দোলনের শুরু থেকে এ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও তার দোসরদের রক্ষায় উলঙ্গভাবে অবস্থান নেয়ায় ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

এছাড়াও ইউএনও সুবল চাকমা বিগত শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় উপজেলার কোন গণমাধ্যম কর্মীকে অতীতের মত এবারও ডাকার প্রয়োজন অনুভব করেননি। যাতে তার ভুমিকা জনমনে গোপন থাকে। কারণ উপজেলা প্রশাসনের যে কোন সভায় গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিততি তার জন্য মাথা ব্যথার কারণ।
এ ইউএনও উপজেলায় যোগদানের পরেই ঈদগাঁও মাছ বাজারের ইজরার পূর্ব পাশের জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানাধিন বলে তার উপর বহুতল ভবন নির্মাণের সুযোগ করে দিয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অথচ ঐ জায়গার উপর থেকে সরকার শতবছর যাবত ইজারা আদায় করেছে।

অন্যদিকে উপজেলা জণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে শতশত গভীর নলকূপ ও স্যানেটারী বরাদ্দ হলে প্রতিটা পিছু ১০ /৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয় কিছু দালাল চক্রের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে কতিথ মুজিব বর্ষের ঘর বরাদ্দে দালালের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে ঈদগাঁও বাজারে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারের সময়সীমা অতিবাহিত ও অপরিকল্পিত নিম্ন মানের নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকলেও তিনিও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেননি।

উপজেলায় প্রচার আছে সরকারের এক উপদেষ্টার সাথে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে, এজন্য তাকেও কেউ কিছু করতে পারবে না বলেও তিনি তার নিকটজনের নিকট একাধিকবার প্রকাশ করেছেন।

আরো অভিযোগ আছে, উপজেলায় সংস্কার কিংবা নির্মাণ কাজ করার বহু ক্ষেত্র রয়েছে। রহস্যময় কারণে তিনি যোগদানের একবছরেও উপজেলায় কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ করেন নি।
আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর এ ইউএনও এখনো কিভাবে ঈদগাঁওতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তা নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা অবিলম্বে তার বদলি দাবি করে উপজেলাকে আওয়ামী দোসর থেকে রক্ষায় জেলা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত