শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০২:২৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৫দফা দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান নোয়াখালীতে বিয়ের আসর থেকে বরসহ আটক-২ রূপগঞ্জে ছাত্রদল নেতাদের হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ বিক্ষোভ মিছিল, ও সড়ক অবরোধ গোবিন্দগঞ্জে মাদকমুক্ত ঘোষণা করে ‘স্মার্ট গ্রাম’ এর উদ্বোধন শ্রমিক নেতাকে আটক করায় দিনাজপুরে সকল রুটে ব্যারিকেট দিয়েছে শ্রমিকরা ভালুকার দুই মাদক ব্যবসায়ী ১২০ কেজি গাঁজাসহ ঢাকায় গ্রেপ্তার পঞ্চগড়ে ‘১২০ টাকায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল(টিআরসি) পদে চাকরি পেল ১৪ জন। বোয়ালমারীতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান নকল শিশু খাদ্য উদ্ধার ও ধবংস বোয়ালমারীতে মৎস্যজীবীদের মাঝে গবাদি পশু বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ মৎস্য কর্মকর্তার অপসারণ দাবি মেহেরপুরে আমঝুপি মিনি স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক

দরিদ্র মোস্তাফিজুরের বিশ্ববিদ্যালয় জয় অর্থাভাবে ভর্তি অনিশ্চিত: দুশ্চিন্তায় বাবা-মা

মো:মেহেদী হাসান ফুয়াদ
দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি

বইয়ের প্রতি আকৃষ্টতা আর প্রবল ইচ্ছা শক্তির কারনে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (২০) এবার ভর্তি পরীক্ষায় এক সাথে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ভর্তির সুযোগ পেয়ে সফলতা আসলেও অর্থের অভাবে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় তার মা বাবা।
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার আনন্দবাজার গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলম ও মুছুদা খাতুন দম্পতির ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। সে এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তার ইচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার। এ সফলতায় তাদের ঘর আলোকিত হয়েছে বটে, কিন্তু সে সঙ্গে বেড়েছে হতাশা ও দুশ্চিন্তা। কারণ সুযোগ পেয়ে সফলতা আসলেও ভর্তি হতে প্রয়োজন অনেক অর্থ। যা যোগান দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
মোস্তাফিজুর রহমান এর বড় দুই বোন রয়েছে, তাদের বিয়ে হয়েছে। তারা স্বামী সংসারে থাকেন। পরিবারে নেই আর্থিক স্বচ্ছলতা। একজনের রোজগারে কোনোরকমে চলে তাদের সংসার। জায়গাজমিও নেই সম্বলমাত্র বাড়ির ভিটাটুকু। ৫ শতক জায়গায় মাটির ঘরে তাদের বসবাস। তবুও মোস্তাফিজুর রহমানের তার শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে।
মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলার উত্তরা ইসলামিয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয়ে ফলাফল ছিল জিপিএ-৫। এবার ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মোস্তাফিজুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাক্রমে ৮৯তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (সি) ১৩০তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (বি) ১৮৮তম, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডি) ৮৯৫তম ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডি) ১১তম মেধাক্রমে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তার ইচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তার পক্ষে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছতা থাকা সত্ত্বেও পড়ালেখাতে কখনো ফাঁকি দেইনি। যতেষ্ঠ মনোযোগ ছিল পড়ালেখায়। স্বপ্ন বুনেছি পড়ালেখা শেষে বড় কিছু হয়ে পরিবারের অভাব-অনটন দুর করব। আজ আমি আমার স্বপ্নদ্বারে। এখন স্বপ্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন বিভাগে ভর্তি এবং পরবর্তীতে বিচারক হওয়া।তিনি জানান, পড়ালেখাকালে শিক্ষকদের যতেষ্ঠ সহযোগিতা পেয়েছি বলেই আজ এতোদুর আসতে পেরেছি। শিক্ষকদ্বয় আমাকে বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়ানোসহ বইপুস্তক সরবরাহ করেছেন। যার ফলে আমার পথটা সহজ হয়েছে। বিশেষ কৃতজ্ঞতা ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের প্রভাষক মোহাইমিনুল ইসলাম স্যার ও প্রভাষক সোহেল রানা স্যারের প্রতি। তাদের সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার জন্য ছিল না কোনো কোচিং। অর্থাভাবে সেটি ভাগ্যে না জুটলে ভর্তি পরীক্ষার একমাস পূর্বে রংপুর ফোকাস ব্যাচে যোগাযেগ করে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের এক্সাম ব্যাচে ভর্তি হই। তাদের ওখানে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে ফেলি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদে সবগুলোতেই মেধাক্রমে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এ আইন বিভাগে ৮৯ তম মেধাক্রমে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমার ইচ্ছে এখানেই ভর্তি হওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার জ্ঞান থাকা প্রয়োজন তাই মোহাইমিনুল স্যার কম্পিউটার জ্ঞান অর্জনের জন্য একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তার খরচে ভর্তি করিয়েছেন। বর্তমানে কম্পিউটার জ্ঞান নিচ্ছি।তিনি আরো জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও এখন পরিবারের টানাপোড়েনে সেই স্বপ্ন থমকে গেছে। এখনও ভর্তির টাকা জোগাড় হয়নি। এছাড়াও ভর্তির পর সেখানে থাকা খাওয়া ও পড়ালেখার খরচ বাড়তি গলার কাটা। আমার হতদরিদ্র বাবার পক্ষে তা বহন করা একেবারে অসম্ভব।
ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মোস্তাফিজুরকে এগিয়ে নিতে। এখন সে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও তার ইচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। তার এ অর্জনে আমরা শিক্ষকদ্বয়সহ পুরো কলেজ গর্বিত। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। পাশাপাশি ভর্তির জন্য তাকে সহযোগিতা করতে আহবান জানাচ্ছি।
এদিকে মোস্তাফিজুরের প্রতিবেশীরা জানান, আমাদের গ্রামে এই প্রথম কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটি পুরো গ্রামের জন্য গর্বের বিষয়। মোস্তাফিজুর রহমান ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। সে প্রতিটি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে। কিন্তু এখন আর্থিক সংকটে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তারা আশা করেন, সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিবিশেষের সহযোগিতা পেলে মোস্তাফিজুর রহমান তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে পারবে।মোস্তাফিজুর রহমানের দিনমজুর বাবা খোরশেদ আলম জানান, স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করার সময় একসঙ্গে এত টাকা লাগেনি। অল্প করে খরচ ছিল, দিনমজুরি করে যা পেরেছি চালিয়েছি। বাকিটা মোস্তাফিজুর মেধাবি হওয়ায় তার স্কুল কলেজের শিক্ষকরা সহযোগিতা করত। এখন একসঙ্গে ভর্তির টাকা, ম্যাচ ভাড়া, খাওয়া খরচ সবমিলিয়ে এত টাকা জোগাড় করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো সম্পদ নেই যে বিক্রি করে ছেলের পেছনে খরচ করবো।ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভর্তির জন্য সহযোগিতা চান মোস্তাফিজুরের বাবা ও মা। তাদের অনুরোধ এই দুঃসময়ে ছেলের স্বপ্নপূরণে সরকারি, বেসরকারি সহযোগিতাসহ মানবিক মানুষগুলো যেন এগিয়ে আসেন সহযোগিতা করতে। সহযোগিতা প্রদানের জন্য ০১৩৩-৩৮৯৭৩৭৭ মুঠোফোনে যোগাযোগের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত