বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গীতে ড্রেনের পানি ফেলা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত- ১ জন । নওগাঁয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিরসঙ্গে ডাসকোর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত বাকশীমুল ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত কমিটি ঘোষণা: সভাপতি জসিমউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক পলাশ নওগাঁয় বাল্যবিবাহ ও প্রতারণা বিশারদ কাজী বেলাল, ভাঙছে শত শত পরিবার মেহেরপুরে বিএনপির কমিটি গঠনে কোন্দল গড়ালো আদালতে মামলায়  অটোপাসের দাবিতে উত্তাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উপাচার্যের ওপর হামলা কপোতাক্ষ নদ থেকে বালু উত্তোলন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপর অবৈধ হাট- বাজার উচ্ছেদের নামে চোর-পুলিশ খেলা মনিবুল হক বসুনিয়াকে কর্মস্থানে পুনর্বহালের দাবিতে রাজারহাটে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাভারের আ.লীগ নেতার সাথে এক ব্যবসায়ী এর ছবি এডিট করে অপপ্রচার- নুরুজ্জামান প্রতিবাদ

নওগাঁয় বাল্যবিবাহ ও প্রতারণা বিশারদ কাজী বেলাল, ভাঙছে শত শত পরিবার

 

আব্দুল মজিদ মল্লিক, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের কথিত নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মো. বেলাল হোসাইনের মাধ্যমে বেড়েই চলেছে বাল্য বিবাহ নিবন্ধন। অর্থের বিনিময়ে নিজ জেলাসহ দেশজুড়ে অবৈধভাবে বাল্য বিয়ে নিবন্ধন করাই যার প্রধান পেশা ও নেশা। যার ফলে পরবর্তীতে অবৈধ নিকাহ রেজিস্ট্রারের কারণে অধিকাংশই সেবা গ্রহিতারা আদালতের আশ্রয়ে গেলেও মিলছে না সঠিক সমাধান আর বাড়ছে আদালতে মামলা জট। সম্প্রতি কাজী বেলালের বিরুদ্ধে একাধিক ভুক্তভোগীর করা লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে।

উপজেলা সদর ইউনিয়নের কচুয়া পশ্চিমপাড়ার প্রবাসী হান্নান সরদারের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার হিনা। হিনা ২০২২ সালে গহেলাপুর এনএস উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সেই বছরই পারিবারিকভাবে উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের সানাপাড়ার কালামের ছেলে আকাশ হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। সেই বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন কাজী মো.বেলাল হোসাইন। বিয়ের ২ বছর পার হতে না হতেই যৌতুক লোভী আকাশের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় হিনার। বর্তমানে আকাশের বিরুদ্ধে করা হিনার পরিবারের নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে করা মামলা চলমান রয়েছে।

সম্প্রতি উপজেলার চকমনু গ্রামের মৃত-ইব্রাহিম আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম কাজী মো.বেলাল হোসাইনের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, ২নং কাশিমপুর ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার বেলাল হোসাইন নিয়োগ পাওয়ার পর হতে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বাল্যবিবাহ নিবন্ধন, নিবন্ধনকালীন সময়ে এক পক্ষের নিকট হতে অর্থের বিনিময়ে মোহরানা বৃদ্ধি করেন। এসব বিষয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলে তিনি টাকার বিনিময়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। তিনি বিগত দিনে বহাল তবিয়তে এমন অবৈধ কাজ করে, অনলাইন জুয়া ও অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে মানুষকে প্রতারিত করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছে। তার এমন অনৈতিক কাজে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত একাধিক ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। তার এমন কার্যকলাপে বহু সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনাও ঘটছে।

রেজাউল ইসলাম আরও বলেন, প্রশাসন খবর পেয়ে যেগুলো বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দেয় পরে অর্থের বিনিময়ে কাজী বেলাল গোপনে সেই বিয়ে নিবন্ধন করে দেয়। সে নিজে এবং তার ভাগিনা, ভাই ও সন্তানকে দিয়ে বেআইনিভাবে নিজ এলাকার বাইরে গিয়ে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করে। এই কাজে সে একাধিক ডুপ্লিকেট বই ব্যবহার করে। বর্তমানে সে অত্র অঞ্চলে বাল্য বিবাহ বিশারদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। অতিদ্রুত বেলাল হোসাইনের বিরুদ্ধে আইনত অভিযোগের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন রেজাউল ইসলাম।

এই বিষয়ে কাজী মো. বেলাল হোসাইনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তা রিসিভ না হওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ও কাজী সমিতির সভাপতি এটিএম রেজাউল ইসলাম বলেন, একজন কাজীর পায়ের শিকল হচ্ছে তার নিজ এলাকা। আর কাজী বেলাল হোসাইন ২০১২ সালে সাবেক এমপি ইসরাফিল আলমকে ম্যানেজ করে অন্য এলাকার বাসিন্দা হয়েও কাজী বেলাল নিজেকে অবৈধভাবে কাশিমপুর ইউনিয়নের কাজী বানিয়ে নেয়। এরপর থেকে কাজী বেলাল অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের ছত্রছাঁয়ায় থেকে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে এখন পর্যন্ত অবৈধ কাজ করে আসছে।

তিনি আরও বলেন, এই বিষয়ে বহুবার জেলা ও উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় অভিযোগ আকারে বলে কোনো লাভ হয়নি। একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কাজী বেলালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা খুবই জরুরি। তা না হলে তার দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রতারিত হতেই থাকবে আর সংসারেও অশান্তি সৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।

নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন একাধিক লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই কাজী বেলাল হোসাইনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললেই তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#

আব্দুল মজিদ মল্লিক
নওগাঁ
০১৭১৪৭২৪৯২৬
২১/০৫/২৫

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত