মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) চেয়ারম্যান পদে বহাল রয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ সাবেক সভাপতি মো. আক্তার হোসেন। সম্প্রতি ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দলীয় অনুগতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হলেও ব্রাহ্মণপাড়ায় বিপরীত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
জানা যায়, বিগত জুলাই মাসে সারাদেশে গণআন্দোলনের সময় সরকারি দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের বহু নেতা আত্মগোপনে গেলেও ব্রাহ্মণপাড়ায় ব্যতিক্রম দেখা গেছে। এখানকার বিআরডিবি চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আক্তার হোসেন, যিনি ওই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আক্তার হোসেনের দায়িত্বে থাকা একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন নিষিদ্ধ নেতা কীভাবে সরকারি পদে বহাল থাকতে পারেন, তা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ একে সরকারের সিদ্ধান্ত ও দায়বদ্ধতার প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর আক্তার হোসেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। নিয়ম অনুযায়ী ২০২৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তার মেয়াদ রয়েছে। যদিও তিনি নিজেকে এখন 'রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয়' দাবি করছেন, তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং সুবিধাভোগের অভিযোগ তার ওপর থেকে সরছে না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, *"২০২৩ সালে আমাকে বিআরডিবির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন আমি রাজনীতির সাথে যুক্ত নই। মেয়াদ শেষ হলে নিজ দায়িত্বেই পদ ছেড়ে দেব।"
তবে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বলছে, আইনি জটিলতার কারণে এখনই এই পদে পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে না। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিআরডিবির কর্মকর্তা মো. রাসেল সারোয়ার বলেন, "৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরেও এখনো বিভিন্ন জায়গায় আগের চেয়ারম্যানরা বহাল আছেন। এ বিষয়ে আমরা সরকারের দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। নির্দেশনা পেলেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"*
এদিকে, সাধারণ মানুষ মনে করেন, একজন রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত এবং নিষিদ্ধ ব্যক্তির হাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সংস্থার নেতৃত্ব থাকা উন্নয়ন কাঠামোর জন্য হুমকি। তারা দাবি তুলছেন, অবিলম্বে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে একজন নিরপেক্ষ, দক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে এ পদে নিযুক্ত করতে হবে।
বর্তমান সরকার ‘দূর্নীতিমুক্ত প্রশাসন’ এবং ‘দলীয় প্রভাবমুক্ত জনসেবা’ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেও ব্রাহ্মণপাড়ার বাস্তবতা যেন ভিন্ন কিছু বলছে। এ অবস্থায় সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের প্রতি দাবি উঠেছে— আইনের শাসন, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন করা হয়।