বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর বাসির মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহের ভালুকায় হাইওয়ে পুলিশের ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত বিএসটিআই’র যৌথ অভিযানে দুই প্রতিষ্ঠানের জরিমানা নোয়াখালীতে যুবককে গুলি করে হত্যা, গ্রেপ্তার-৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডিবি পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ ১ জন আটক গোবিন্দগঞ্জে বাড়ীতে হামলা ও বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, ৩ ঘন্টা পর উদ্ধার, মূল অভিযুক্ত সঞ্চয় গ্রেফতার নওগাঁর পোরশায় ৮ম শ্রেনীর ছাত্রীকে পালাক্রমে গণধর্ষণের মামলায় দুইজন যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার অভিযানে চুরি হওয়া গরুসহ দুই চোর গ্রেফতার  পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ মেহেরপুরে নিম্ন আদালতের দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারকদের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

পল্লী ব্যাংকে আইটি পরামর্শক ও উপপরামর্শক পদে বিপুল বেতনে চাকরি করছেন দুই কর্মকর্তা

কামরুল ইসলাম: পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে সরকারি কাঠামো অনুযায়ী কোনো পদ না থাকলেও আইটি পরামর্শক ও উপপরামর্শক পদে বিপুল বেতনে চাকরি করছেন দুই কর্মকর্তা। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে সরকারি বেতন কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ বেতন ভোগ করে আসছিলেন তারা। জনবল চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও তাদের চুক্তি নবায়নের অনুমোদন দিয়েছে ব্যাংকটির ১২৭তম বোর্ড সভায়। তাদেরকে নিয়োগ প্রদান করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবিধানমালা ২০২২ গোপন করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে। অথচ যাদেরকে নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনাব সাইমুম রহমান সজিব বেতন থেকে কোন ভ্যাট এবং ট্যাক্স কর্তন করে সরকারী কোষাগারে জমা করেনি। তিনি চাকুরীতে যোগদান করেন ২৮/০৬/২০১৭। চকুরীর মেয়াদ শেষ হয় ৩০/১২/২০২৪ মোট চাকুরী কাল ৭ বছর ৬ মাস। জনাব সাইমুম রহমান সজিব এর বেতন ৮০,০০০। বেতন থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স ২৫% কর্তন করলে সর্বমোট পাবে ৬০,০০০। তার প্রাপ্য বেতন থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্ত করেননি। তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ১৮,০০,০০০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও জনাব নাসিম আহমেদ এর বেতন ১,০০,০০০। চাকুরীতে যোগদান করেন ২৯/১১/২০১৭। চকুরীর মেয়াদ শেষ হয় ৩০/১২/২০২৪ মোট চাকুরী কাল ৭ বছর ১ মাস। বেতন ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্ত করেননি। তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ২১,২৫,০০০ লক্ষ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শুরুর দিকে সরকারি জনবল না থাকায় চুক্তিভিত্তিক লোক দিয়ে কার্যক্রম চলে। নতুন চালু হওয়া ব্যাংকের কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে ২০১৭ সালে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (হার্ড) পদে নাসিম আহমেদ এবং সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে মু, সাইমুম রহমান নিয়োগ পান। দক্ষ জনবলের আওতায় তাদেরকে সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ বেতনে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে দেনদরবারের মাধ্যমে তারা দফায় দফায় চুক্তি নবায়ন করে এখনও চাকরিতে বহাল আছেন।

অথচ সরকারি কাঠামোর আওতায় জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ দ্বিগুণ বেতনে অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয় করছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। আগের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বেতন নির্ধারণ করে গত ৫ ডিসেম্বর তাদের চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন করে ব্যাংকটির পর্ষদ।

এরপূর্বে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সুপারিশে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকুরী প্রবিধানমালা-২০২২ গোপন করা হয়। ২০১৪ সালের আইনের ধারা উল্লেখ করে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করে বোর্ড। বিষয়টি নিয়ে তখন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে তাদেরকে সরাসরি নিয়োগ না দিয়ে পুনরায় বোর্ডের কাছে পাঠিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনাটি পাঠানো হয় গত ১৬ জানুয়ারি।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের যে আইনের ধারার দোহাই দিয়ে এই দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছে, সেটি মূলত ব্যবসায়িক চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগের অপচেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাংকটির একটি চক্র। অথচ ২০২২ সালে প্রণীত প্রবিধানে এ ধরনের নিয়োগের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বিগত সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া অন্য কোনো কর্মকর্তার চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। কেবল এই দুই কর্মকর্তার ক্ষেত্রে অদৃশ্য কারণে কোনো নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না।এবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রতানে দেনদরবারের শীর্ষে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সিস্টেম এনালিস্ট জনাব ফেরদৌস বিন আলীম সিন্ডিকেট। জনাব ফেরদৌস বিন আলীম সিস্টেম এনালিস্ট পদে কর্মরত আছেন। উক্ত পদে অভিজ্ঞতার কাগজ জালিয়াতি করে চাকুরী নিয়েছেন বলে ব্যাংকে একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র প্রিন্সিপল অফিসার জানান। এই সিন্ডিকেটের পর্দার অন্তরালে নেতৃত্ব দেন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক খান ইকবাল হোসেন এবং এ, বি, এম জাহিদ হোসেন মহাব্যবস্থাপক। বেসিক ব্যাংকের মতো ভালো একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংককে কেলেঙ্কারিময় ব্যাংকে পরিণত করার হোতা ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মূল হোতার সহযোগীর তালিকার ৪৬ ব্যাংক কর্মকর্তার ০১ জন হলেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক খান ইকবাল হোসেন। তৎকালীন সময়ে তিনি উপমহাব্যবস্থাপক ছিলেন।

ব্যাংকটির বোর্ড রাষ্ট্রের কাছে তথ্য গোপন করে এই দুই কর্মকর্তাকে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমা বানুর মোবাইল ফোনে অনেকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলে তিনি সাড়া দেননি। এ বিষয়ে ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এর সংঙ্গ বথা বললে উনি জানান, ভাই নাসিম আহমেদ এর বউ ও শ্বশুর মারা গেছে উনাকে নিয়োগ দিলে উনার পরিবার উপকৃত হবে।

এ বিষয়ে ব্যাংকটির বোর্ড সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ অন্যান্য বোর্ড সদস্যদের অন্ধকারে রেখে প্রবিধান ২০২২ গোপন করে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (হার্ড) পদে নাসিম আহমেদ এবং সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে মু. সাইমুম রহমানকে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান।

ব্যাংকের একজন বোর্ড সদস্য মহতাব জাবিন বলেন, ‘যখন লোক ছিল না, তখন বেশি অর্থ খরচ করে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন যেহেতু জনবল আছে, তাই তাদের চুক্তি নবায়নের কোনো যৌক্তিকতা নেই’।

এর বাইরেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যাংকের কয়েকজন জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২০ সালে এই দুই কর্মকর্তাসহ চারজনকে সরাসরি স্থায়ী করার প্রক্রিয়া শুরু হলে তা বন্ধ করে দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর জারি করা এক আদেশে তাদের স্থায়ীকরণ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত