বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এক মুসলিম কৃষক বিএসএফের হাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিতের পরই তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
নিহত কৃষক জাহানুর হক (২৪) ভোরাম পয়াস্তি গ্রামের বাসিন্দা। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল ভোরবেলা মাঠে সেচ দিতে যাওয়ার সময় সীমান্ত পিলার নম্বর ৯২৯-এর আশপাশে তাকে আটকায় বিএসএফ সদস্যরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রথমে তাকে জোরপূর্বক জামা খুলে ধর্মীয় পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়। মুসলিম পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।
অভিযোগে বলা হয়, বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার বলবন্ত প্রথমে জাহানুরকে মাটিতে ফেলে তার বুকে পা রেখে গুলি করেন। সেই গুলি তার তলপেটে লাগে। পরে আরেক বিএসএফ সদস্য তার মাথায় দ্বিতীয় গুলি চালায়। প্রায় ছয় ঘণ্টা জাহানুরের মরদেহ খোলা জায়গায় পড়ে থাকলেও, বিএসএফ পরিবারের সদস্যদের কাছে যেতে বাধা দেয়।
দুপুর নাগাদ স্থানীয় দিঘাটা থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত পাঠানো হলেও, চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে তা একদিন পিছিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, অটোপসিতে মাথার খুলির অংশ পরীক্ষা করা হয়নি, যা প্রক্রিয়াগত গাফিলতির ইঙ্গিত দেয়।
জাহানুর হকের পরিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও, এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে গ্রেফতার বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি। শুধু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতের মা রিনা বিবি বলেন, “আমরা বিচার চাই। আমার ছেলেকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ দিয়েও প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করছে না।”
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, এটি নিছক একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং ধর্মীয় বিদ্বেষ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
এ ধরনের ঘটনা ভারতীয় গণতন্ত্র ও সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করে। আন্তর্জাতিক মহল ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপ ছাড়া ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।