সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ শাহজাহান বাশার
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৮ মে) সকালে উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হক।
গ্রেপ্তারকৃত সাহেব আলী বর্তমানে বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য। পাশাপাশি তিনি আগে মোকাম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বুড়িচংয়ের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এই আন্দোলনে স্থানীয় জনগণ ও ছাত্র সমাজ একত্রিত হয়ে সামাজিক অবিচার, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
অভিযোগ রয়েছে, তখনকার আন্দোলনের একাধিক সমাবেশে হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়। গুলির ঘটনা, লাঠিচার্জ এবং আন্দোলনকারীদের উপর শারীরিক নির্যাতনেরও অভিযোগ ওঠে। সেই সময়কার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং আহতদের চিকিৎসা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাহেব আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
ওসি আজিজুল হক জানান, “উক্ত মামলায় দীর্ঘ তদন্তের ভিত্তিতে সাহেব আলীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে।”
সাহেব আলীর বিরুদ্ধে পূর্বেও রাজনৈতিকভাবে প্রভাব খাটানোর, বিরোধীদের দমন, এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এসব অভিযোগ কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের মুখ দেখেনি। এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে চলমান বিতর্ক আবারো সামনে চলে এসেছে।
তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় একটি অংশ সাহেব আলীর গ্রেপ্তারকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করে বলছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের দাবি, “সাহেব আলী জনপ্রিয় এবং উন্নয়নমুখী একজন চেয়ারম্যান। তার জনপ্রিয়তাই এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের টার্গেট।”
ঘটনার পর থেকে কোরপাই ও মোকাম ইউনিয়নে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশি পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একাংশ এই গ্রেপ্তার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ ও আইনি প্রক্রিয়া
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাহেব আলীকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হতে পারে, যাতে তদন্তে আরও তথ্য পাওয়া যায়। মামলার অন্যান্য আসামিদের সনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় রাজনীতির ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ছাত্র আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া এবং গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ সব মিলিয়ে সাহেব আলীর গ্রেপ্তার কুমিল্লার বুড়িচং এলাকায় নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি করেছে। এটি শুধু একটি ব্যক্তির গ্রেপ্তার নয়, বরং ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচারের প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় অবস্থানের একটি প্রতিচ্ছবি বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।