সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৬:০৭ অপরাহ্ন
ফাতিমা আক্তার লিজা
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ কৃষকেরা। উপজেলাজুড়ে পুরোদমে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। ফলন ভালো হলেও বাজারমূল্য কম হওয়ায় কৃষকের মুখে নেই হাসি।
কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচের তুলনায় ধানের বর্তমান বাজারমূল্য অনেক কম। জমি প্রস্তুত, সার, বীজ, বীজতলা, বালাইনাশক, কৃষাণ মজুরি—সব মিলিয়ে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৯০০-৯৫০ টাকা, অথচ বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১১০০ টাকায়। এতে অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদন খরচই উঠছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ভূরুঙ্গামারীতে ১৬,৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে ৮,৯৫০ হেক্টরে, উফসি ৭,৫৩০ হেক্টরে এবং স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে ৫ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১০০% অর্জন হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১,১২,০৯৮ মেট্রিক টন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে। ছোট ও মাঝারি কৃষকেরা নিজেরাই ধান কাটছেন, বড় কৃষকেরা নির্ভর করছেন শ্রমিকের ওপর। বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চুক্তিভিত্তিক ধান কর্তন পদ্ধতি। একরপ্রতি ধান কর্তন ও মাড়াইয়ের চুক্তিভিত্তিক খরচ পড়ছে প্রায় ১২,৫০০ টাকা, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি চাপ।
সোনাহাট ইউনিয়নের কৃষক আবুল কালাম বলেন, “যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে, তাতে করে ধান রোপণ করে কৃষক ফতুর হয়ে যাচ্ছে। ভুট্টা, বাদাম, তিল, সরিষার মতো ফসলে লাভ বেশি। অথচ ধান চাষে পরিশ্রম বেশি, লাভ কম।”
পাকেরছড়া ইউনিয়নের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, “আমি তিন একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম না থাকায় এবার লোকসান হবে। আগে শুধু ধান চাষ করেই সংসার চলত, এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।”
এদিকে কুড়িগ্রামের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রীমা মনি শীল জানান, “সরকারি দরে ধানের কেজি ৩৬-৩৮ টাকা নির্ধারণ করা আছে, অর্থাৎ প্রতি মণ ১৪০০-১৫০০ টাকা। তবে বাজারে কৃষকরা সেই দাম পাচ্ছেন না।”
বাজারে কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের দায়িত্ব শুধু বাজার মনিটরিং করা, শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।”