বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০২:২১ পূর্বাহ্ন
মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের সিংড়ায় ধানবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের সময় বিএনপির এক সাবেক ইউনিয়ন নেতা ও তার সহযোগী দুইজনকে হাতেনাতে আটক করেছে সেনাবাহিনী। পরে আটককৃতদের সিংড়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, তবে সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জানা যায়, মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের রানীনগর এলাকা থেকে দুটি ট্রাকে করে ধান কুষ্টিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হচ্ছিল। ট্রাক দুটি শেরকোল শাহী বাজার এলাকায় পৌঁছালে কিছু দুর্বৃত্ত তাদের পথরোধ করে এবং চালকদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। এ সময় তারা ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে বলে অভিযোগ ওঠে।
ধানের মালিক আবু বক্কর নামের এক ব্যক্তি বলেন, “আমাদের ধানের ট্রাক দুটি বাজার এলাকায় পৌঁছালে একদল লোক এসে চাঁদা দাবি করে। তারা ভয় দেখায় যে চাঁদা না দিলে ট্রাক আটকে দেবে এবং মালামাল নামিয়ে ফেলবে। এমন অবস্থায় আমি সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য চাই।”
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় এবং তিনজনকে ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে আটক করে। আটককৃতরা হলেন—শেরকোল ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সম্প্রতি ঘোষিত শেরকোল সমজান আলী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন, শেরকোল ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পলাশ আহমেদ এবং জয়নাল আবেদীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মিলন হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নাল আবেদীন এর আগেও বিভিন্ন সময় বাজারের পরিবহন ও কৃষিপণ্য বহনকারী গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে আলোচনায় ছিলেন। সম্প্রতি তিনি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন, যা তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “সেনাবাহিনী তিনজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে ধান মালিক পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”
এ ঘটনায় স্থানীয় কৃষক ও পরিবহন মালিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেন, “যদি সেনাবাহিনী সময়মতো না আসত, তাহলে আমাদের পণ্য হয়তো লুট হয়ে যেত কিংবা বড় ক্ষতির শিকার হতাম।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “সাধারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে কেউ যদি রাজনীতি করতে চায়, তবে তাদের জন্য কোনো জায়গা এই সমাজে থাকতে পারে না।”
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিংড়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল এবং আটকদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছিল।