সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ১১:২৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ শাহজাহান বাশার
কুমিল্লা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এক নতুন মোড় নিয়েছে। কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে বলেছেন, “হাসনাত আবদুল্লাহ একজন মানসিক রোগী। তাকে ৭ দিনের সময় দিচ্ছি—এই সময়ের মধ্যে সে যদি প্রকাশ্যে ক্ষমা না চায়, তাহলে কুমিল্লায় সে আর কোনো মিটিং-মিছিল করতে পারবে না।”
সংবাদ সম্মেলনটি সোমবার দুপুরে কুমিল্লা শহরের একটি স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী এবং রাজনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “একজন রাজনৈতিক কর্মী যখন নিজের সীমা লঙ্ঘন করে, সংগঠনের সিনিয়রদের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও মিথ্যাচার করে, তখন তাকে আর রাজনীতির ময়দানে ছাড় দেওয়া যায় না। হাসনাত আবদুল্লাহ বারবার দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, যা প্রতিনিয়ত সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
তিনি আরো বলেন, “হাসনাত আবদুল্লাহর ভাষা, আচরণ এবং কার্যক্রমে একজন সুস্থ মানুষের কোনো লক্ষণ নেই। তার বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই আমি তাকে ‘মানসিক রোগী’ বলেছি। তবে আমি তাকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি—সে যদি আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চায়, তাহলে তাকে কুমিল্লায় আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেব না।”
বিএনপির বিভিন্ন সূত্র জানায়, কুমিল্লা মহানগর ও জেলা বিএনপির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব নিয়ে অন্তর্কোন্দল চলে আসছে। সম্প্রতি একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে হাসনাত আবদুল্লাহ, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে ‘ভণ্ড, সুবিধাবাদী এবং সরকারি প্রভাবে পরিচালিত’ বলে অভিযোগ তোলেন। এই অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
এর জবাবে সেলিম ভূঁইয়া প্রথমে দলের ভেতরে থেকে আলোচনার চেষ্টা করলেও, হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন এবং পাল্টা বক্তব্য দিতে থাকেন। এরপরই সেলিম ভূঁইয়া প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে কড়া হুঁশিয়ারি দেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “দলের মধ্যে ভিন্নমত থাকতেই পারে। কিন্তু সেটিকে রাজনৈতিক সৌজন্যের মধ্যে রেখে আলোচনা করা দরকার। প্রকাশ্যে একে অপরকে মানসিক রোগী বলাটা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত এই সংকট দ্রুত সমাধান করা।”
অন্যদিকে হাসনাত আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, তিনি সেলিম ভূঁইয়ার বক্তব্যে ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ এবং পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনের সময়ে এমন প্রকাশ্য কোন্দল দলটির সাংগঠনিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে। একজন বিশ্লেষক বলেন, “এই মুহূর্তে বিএনপির উচিত নেতৃত্বের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা। কিন্তু কুমিল্লা থেকে শুরু হওয়া এই বিতর্ক দলের উপর মহলেও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।”
বিএনপির মাঠ পর্যায়ে বিরোধী রাজনীতির গতি যখন নতুন মাত্রা পাচ্ছে, তখন অভ্যন্তরীণ কোন্দলের এ ধরনের উগ্র ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিবৃতি দলকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে বলেই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। এখন দেখার বিষয়—হাসনাত আবদুল্লাহ ক্ষমা চান কিনা, নাকি কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতিতে আরও বড় সংঘাত দেখা দেয়।