বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন
মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার
দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসা শেষে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হন। পুরো বিমানবন্দর এলাকা একসময় রূপ নেয় গণসমাবেশে। দলীয় প্রধানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে স্লোগান, ব্যানার, ফেস্টুনে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ।
এই আবেগঘন মুহূর্তে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও খালেদা জিয়ার আগমনে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, “আমরা বিশ্বাস করতে চাই, জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের আপামর ছাত্র জনতা যে আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বুকে ধারণ করে অকাতরে রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে; সেই আকাঙ্ক্ষাগুলোকে সামনে রেখে তিনি এবং তার দল বিএনপি আপোসহীনভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাবেন।” একইসঙ্গে তিনি বেগম জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে এদিন দেশে ফিরেছেন তার দুই পুত্রবধূ—জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান। এর মধ্যে জোবাইদা রহমান ১৭ বছর পর বাংলাদেশে পা রাখলেন, যা দলের কর্মীদের মধ্যে আরও একটি আবেগঘন মুহূর্তের জন্ম দেয়। তার ফেরাকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ও দলে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে আশাবাদী—দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর রওনা দেয়। এ সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত হন। জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে তারা স্লোগানে স্লোগানে বিমুগ্ধ করে পুরো পরিবেশ। যানজট ও উপচে পড়া ভিড়ের কারণে গাড়িবহর ধীরগতিতে অগ্রসর হয়, তবে তা যেন নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাসকে কোনোভাবেই কমিয়ে দিতে পারেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই প্রত্যাবর্তন রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে থাকলেও, এখন তার উপস্থিতি দলের মধ্যে নতুন প্রাণসঞ্চার করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দেশে ফিরে কিছুদিন বিশ্রামের পর দলের হাইকম্যান্ডের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন খালেদা জিয়া। তার চিকিৎসা, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং জাতীয় রাজনীতির চলমান প্রেক্ষাপটে দলের পরবর্তী করণীয় নিয়েই আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে সারজিস আলমের মতো ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের শুভেচ্ছা বার্তা প্রমাণ করে যে, দেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তিনি এখনো অনেকের অনুপ্রেরণার নাম।