বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
অনলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে পরিচালিত একটি ভুয়া ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন জেলার বুড়িচং উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রাজনীতি করে আসছিলেন।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরীর একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে বুধবার (১৪ মে) দুপুরে তাকে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি একটি অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে কুমিল্লার কিছু এলাকায় সরকার বিরোধী তৎপরতা ও সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। সন্দেহজনকভাবে ওই বৈঠকে যুক্ত ছিলেন অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম। পুলিশ দাবি করছে, এটি ছিল শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে গোপনে চালানো একটি ছদ্মবেশী ভার্চুয়াল সভা, যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে উত্তেজনা তৈরির ছক ও হামলার রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এর আগে একই অভিযোগে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ফলে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হলো, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানায়, ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে দেশে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলির ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০২৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রথমবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। যদিও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
পুলিশের দাবি, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর রেজাউল করিম রাজনৈতিকভাবে আরও চরমপন্থী ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সাম্প্রতিক অনলাইন বৈঠকে তার উপস্থিতি এবং বক্তব্য যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, তিনি নাশকতা বা সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম জানান, “রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই নেতা বিভিন্ন সময় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন। অনলাইন মিটিংয়ের আলামত, কথোপকথন ও যোগাযোগের নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তের পর আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, “তার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলার মামলাও রয়েছে। একই ব্যক্তি বারবার জামিনে এসে পুনরায় নাশকতার পরিকল্পনা করছে—এমনটি মেনে নেওয়া যায় না।”
একজন সক্রিয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে গভীর উদ্বেগ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি শুধুই ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ভুয়া সভায় অংশগ্রহণের ফল, কেউ কেউ বলছেন, দলীয় ভেতরেও বিভাজন ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে কেউ যদি সরকারবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত হন, তবে তা দলের ভাবমূর্তির ওপরও প্রভাব ফেলে। ফলে এসব ঘটনায় দলকেও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে পুলিশ রেজাউল করিমের মোবাইল, ল্যাপটপ ও অনলাইন মেসেজিং অ্যাপের ডেটা বিশ্লেষণ করছে। কারা তাকে এই ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত করেছে, সে বৈঠকে আরও কারা অংশ নিয়েছেন, কুমিল্লায় কী ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল—এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে যদি আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে, তবে নতুন করে মামলা ও অভিযানে যেতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।